বায়ার্ন মিউনিখের রঙটা লাল। মিউনিখের স্টেডিয়াম বছরের বেশিরভাগ সময়টা থাকে লালের সাজে। সেখানে আজ রাতে জার্মানি নেই। তবে লালের উৎসব চলল জোরেশোরে। স্পেনের সমর্থকরা গ্যালারি মাতিয়ে রেখেছিলেন শুরু থেকেই। লালের সেই উৎসবটা চলল একেবারে শেষ পর্যন্ত। প্রথমার্ধের দুর্দান্ত অ্যাটাকিং ফুটবলের পর তাদের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে রক্ষণের কাজে। সেখানে পুরো মার্কসই পাবে স্পেন। আর তাতে হতাশার নীলে ডুবল ফ্রান্সও।
ফ্রান্সের সমর্থকরা দখল করেছিলেন গ্যালারির একাংশ। সেখানেই নীল সাগরের গর্জনের মতো করে একের পর এক আছড়ে পড়ল ফ্রান্সের আক্রমণের ঢেউ। কিন্তু সাগরপাড়ের স্পেন যে ঝড় সামাল দিতে জানে! সঙ্গে ভাগ্যের সহায়তাও তারা পেয়েছে। ৭৫ মিনিটে ডিবক্সের মাথায় থেও হার্নান্দেজ কিংবা ৮৫ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের শট ওভাবে মিস হবে সেটা কেইইবা ভেবেছিল।
শেষ পর্যন্ত ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ হলো ম্যাচের প্রথমার্ধের সেই তিন গোলেই। ২৪ মিনিটের মাথায় এদিন তিন গোল দেখেছিল ফুটবল দুনিয়া। ৮ মিনিটে লিড নেয়ার পর ফ্রান্স সেই লিড হারায় ৪ মিনিটে দুই গোল হজম করে। ২–১ গোলের জয়ে বার্লিনের ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করল স্পেন। টানা ৬ ম্যাচ জিতে ফাইনালে গেল লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা। ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দল পেল টানা ৬ জয়। রেকর্ড হয়েছে লামিনে ইয়ামালেরও। ১৬ বছরের এই কিশোর এখন ইউরোর ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়েসী গোলদাতা।
মিউনিখের ক্লাসিক্যাল সেমিফাইনালে প্রথম ২৫ মিনিটেই স্কোরবোর্ডে উঠল তিন গোল। ফ্রান্সের লিড ফেরাতে স্পেন সময় নিয়েছে মোটে ১৬ মিনিট। চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে স্পেন এদিন জানান দিল, কেন টুর্নামেন্টে তারা এসেছে ফেবারিটের তকমা নিয়ে। ২–১ গোলের লিডে ম্যাচে আধিপত্য রেখেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা।
মিউনিখে সেমিফাইনালের আগে দিদিয়ে দেশাম বলেছিলেন, যারা সুন্দর ফুটবল দেখতে চান, তাদের ফ্রান্সের খেলা না দেখলেও চলবে। কোচ দেশামের কথায় স্পষ্ট ছিল, জয়টাই তার কাছে ছিল মুখ্য। স্পেনের বিপক্ষে প্রথমার্ধের পার হলো সেভাবেই। চোখ জুড়ানো খেলা উপহার দিয়েছে স্পেন। কিন্তু, ম্যাচে লিড পেয়েছে ফ্রান্স। বামপ্রান্তে অ্যাটাক বিল্ডআপে বল পেয়ে যান কিলিয়ান এমবাপে। হেসুস নাভাসকে বিট করে বাড়িয়ে দেন মাপা এক ক্রস। সহজেই মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন কোলো মুয়ানি। ৮ মিনিটেই লিড পেয়ে যায় ফ্রান্স।
ম্যাচের ২০ মিনিটে এসে দেখা মিলল লামিনে ইয়ামাল মোমেন্ট! বক্সের বাইরে থেকে ১৬ বছর বয়েসী স্প্যানিশ টিনএজারের দুর্দান্ত এক শট। ফ্রান্স গোলরক্ষক মাইক মানিয়ানের কোনো সুযোগই ছিল না অমন এক গোল ঠেকাবার। দুর্দান্ত এক শটে সমতায় ফিরে আসে স্পেন। ২০ মিনিটেই ফ্রান্স–স্পেন সেমিফাইনাল দেখল দুই গোল। এই গোল দিয়ে রেকর্ডও করে ফেলেছেন লামিনে ইয়ামাল। ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে পেলেন গোলের দেখা।
এরপরেই স্পেনের আবার আঘাত। ২৪ মিনিটে হেসুস নাভাসের ক্রস থেকে বল ক্লিয়ারে ব্যর্থ হয় ফ্রান্স। ফাঁকায় পেয়ে দুর্দান্ত শট দানি ওলমোর। জুলস কুন্ডের পায়ে লেগে বল জড়ায় জালে। দানি ওলমোর সেই শট ছিল অন টার্গেট। খানিক সময় পর গোল দেয়া হলো ওলমোর নামেই। তবে নামের চেয়েও বড় ছিল স্পেনের লিড। চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে সেমিতে স্পেনের কামব্যাক।
প্রথমার্ধ এরপরেও বিনোদন দিয়ে গেল ফুটবল ভক্তদের। ফ্রান্স আক্রমণের ধার বাড়িয়েছিল। একাধিকবার বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিকও আদায় করেছিলেন কোলো মুয়ানি–এমবাপেরা। কিন্তু সেখান থেকে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে ফ্রান্সের আক্রমণভাগ। দ্বিতীয়ার্ধে এসেও বদলাল না সেই চিত্র। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ফ্রান্স ছিল আরও বেশি ভয়ানক।
ঠিক এমন এক ফ্রান্সকেই পুরো আসরে দেখতে চেয়েছিল ভক্তরা। সেমিফাইনালের আগে ওপেন–প্লে থেকে গোল না পাওয়া ফ্রান্স এদিন খেলল নিজেদের সবটা উজাড় করে দিয়ে। কিন্তু কখনো উনাই সিমনের দানবীয় সেইভ। আবার কখনোবা নিজেদের সহজ মিসে ফ্রান্স পারেনি সমতা আনতে। প্রথম খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ইউরো ও বিশ্বকাপ জেতার ডাবল পূর্ণ করা হলো না দিদিয়ের দেঁশামের।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য এমন কিছু নেই যা ফ্রান্স করেনি। এদুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা, ব্রাডলি বারকোলা, আঁতোয়ান গ্রিজমানকে নামিয়েছিলেন কোচ দেঁশাম। এমনকি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুডের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ তারা মিস করে গেল একের পর এক। ৬৫ মিনিটে উনাই সিমন নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বাঁচান দলকে। ৭৫ মিনিটে হার্নান্দেজ পেয়েছিলেন ম্যাচের সেরা সুযোগ। কিন্তু কাজের কাজটা করা হয়নি এই লেফটব্যাকের।
শেষদিকে অবশ্য আর সেভাবে চেপে ধরা হয়নি তাদের। স্পেনই বলের দখল নিয়ে বিপদমুক্ত রেখেছে নিজেদের। আর তাতেই নিশ্চিত হলো জয়। টানা জয় নিয়ে স্পেন চলে গেল ফাইনালে। ইংল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পর জানা যাবে কারা হবে তাদের প্রতিপক্ষ।
For more information
আরো দেখুন|
Summary
Article Name
ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরোর ফাইনালে স্পেন
Description
বায়ার্ন মিউনিখের রঙটা লাল। মিউনিখের স্টেডিয়াম বছরের বেশিরভাগ সময়টা থাকে লালের সাজে। সেখানে আজ রাতে জার্মানি নেই...
Author
sylheterawaz
Publisher Name
sylheterawaz
Publisher Logo