হবিগঞ্জ–৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে ‘হত্যাপরিকল্পনার নাটক’ সাজানো প্রতারক সোহাগ মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ জেলা ও সিটিটিসি’র সমন্বয়ে গঠিত পুলিশের একটি টিম।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে সিলেট মহানগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোহাগ মিয়া মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের মো. মন্তাজ মিয়ার ছেলে।
বুধবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন। এসপি বলেন, গত ২৮ জুন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় যে তার জীবনের ঝুঁকি আছে এবং এই সংক্রান্ত তার কাছে তথ্য আছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে চুনারুঘাট থানার একটি সাধারণ ডায়রি হয়।
একই ঘটনায় সংসদ সদস্য নিজেই ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তার প্রতিকার চান। যা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এরই প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলাপুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সিটিটিসি ঢাকা–এর সমন্বয়ে গঠিত টিম ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর থেকে সোহাগকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সুপার বলেন– জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ জানিয়েছে, সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যায় এবং ৬–৭ বৎসর অবস্থান করে ২০১৮ সালে দেশে আসে। দেশে আসার পর কতিপয় দালালের সাথে যোগাযোগ করে তার এলাকার ১২ জন লোককে পর্তুগাল পাঠাবে বলে প্রতিজনের নিকট থেকে ৮/১০ লাখ করে টাকা নিয়ে দালালকে প্রদান করেও তাদের বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে বিদেশ গমনেচ্ছুকের চাপে সোহাগ মিয়া তাদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে ভারতে চলে যায় এবং সেখানে এক বছর অবস্থান করে দেশে ফেরত আসে। তারপর সে আর্থিক অভাব–অনটনের দূর করতে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করে এবং ইন্টারনেট হতে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ধারনা নিতে গিয়ে ডার্ক ওয়েব–এর সাথে পরিচিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সে ইউএসএ–এর ভিপিএন অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েব সাইট ব্যবহার করে হিটম্যান নেটওয়ার্ক লিংকসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করে। হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে প্রবেশ করার পর সে ভারতীয় একটি গল্প পড়ে। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে। কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন তার জীবনের উপর হুমকি আছে মর্মে বিভিন্ন ভিডিওতে প্রকাশ করে। যা সোহাগ মিয়া দেখতে পেয়ে সে নিজে নিজে একটি পরিকল্পনা করে যে, হিটম্যান নেটওয়ার্ক সাইটে উল্লেখিত গল্পের আঙ্গিকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করবে।
কিন্তু ব্যারিস্টার সুমন কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল নাম্বার তার কাছে না থাকায় সে স্থানীয় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ–এর সরকারীর মোবাইল নাম্বারে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে এবং সে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করে। পরে ওসি‘র মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে সে কথা বলে এবং ব্যারিস্টার সুমনকে সে জানায় যে, ৪/৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার জন্য কিলিং মিশনে নেমেছে।
সোহাগের উদ্দেশ্য ছিলো– ব্যারিষ্টার সুমন নিজে কিংবা তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে কিলিং মিশনের সদস্যদের সম্পর্কে তার কাছে তথ্য চাইবে। তখন সে তথ্য প্রদানের বাহানা করে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবী করবে।
কিন্তু ব্যারিস্টার সুমনকে বিষয়টি জানানোর পরদিন তিনি এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে এর প্রতিকার চান ও থানায় জিডি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সোহাগ ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যায়। যখন সে বুঝতে পারে– তাকে কেউ ট্র্যাক করছে তখন সে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে চলে আসে। পুলিশ সুপার জানান, সোহাগের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে। এছাড়া সে অনলাইন জুয়ায়ও আসক্ত।
For more information
আরো দেখুন|
Summary
Article Name
ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা পুরোটাই: নাটক !
Description
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে ‘হত্যাপরিকল্পনার নাটক’ সাজানো প্রতারক সোহাগ মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ...
Author
sylheterawaz
Publisher Name
sylheterawaz
Publisher Logo