আওয়াজ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের মংডু সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছেন। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম এই গোষ্ঠীর কমপক্ষে ২০ হাজার সদস্য সীমান্তে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বেশ কিছু লাশ নাফ নদী ধরে বাংলাদেশে ভেসে এসেছে। টেকনাফের একজন এনজিও কর্মী বাংলাদেশে কিছু লাশ দাফনের দাবি করেছেন। সেখানকার একজন রোহিঙ্গা বলেছেন, ড্রোন হামলায় মংডু এলাকায় তার ৯ জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন। আর আহত চারজন বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা ও টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের মংডুতে ড্রোন হামলা ও গুলি ছোড়া হয়। আরাকান আর্মি এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তবে গণমাধ্যমে এখন পর্যন্ত অর্ধশত লাশ বাংলাদেশে ভেসে আসার খবর দিয়েছে। টেকনাফ এলাকার এনজিও কর্মী মাহবুব আলম মিনার বলেছেন, ‘‘আমার তত্ত্বাবধানেই ১৭০ জন রোহিঙ্গার লাশ আমরা এখানে দাফন করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাফন করা হয়েছে শাহপরীর দ্বীপে বড় মাদ্রাসা মসজিদের কবরস্থানে, সেখানে ৫৫টি লাশ দাফন করা হয়েছে।’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি যে তথ্য পেয়েছি তাতে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের ওই পাড়ে কমপক্ষে সাত থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।’’
টেকনাফ এলাকার এক ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুন নূর বলেন, ‘‘ড্রোন হামলা ও গুলিতে আমাদের পরিবারের চারজনসহ আমার পরিচিত মোট ৯ জন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আহত অবস্থায় পালিয়ে আসতে পেরেছেন চারজন। তাদের মধ্যে আমার বোন ও তার ছেলে–মেয়েরা আছে। তাদের বাংলাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’’
‘‘আমার জানা মতে, সীমান্তের ওপারে ২০–৩০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ,’’ বলেন তিনি। আর কুতুপালং ক্যাম্পের ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘কিছু রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে আসছেন। তবে আসার অপেক্ষায় আছেন কয়েক হাজার। তারা মংডুতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়ের তোপের মুখে পড়েছেন।’’
মিয়ামারের আরাকানের সিত্তে শহরে বাংলাদেশের সাবেক মিশন প্রধান মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। ফলে এখন মংডু এলাকার রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। ওই ড্রোন হামলা আরাকান আর্মি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা যে খবর পাচ্ছি তাতে প্রতিদিনই সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। আর তারা সীমান্তে এসে জড়ো হচ্ছেন। সীমান্ত সীল করা থাকায় তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছেন না।’’
তার কথা, ‘‘এখন বাংলাদেশ সরকারের চীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা দরকার। কারণ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়ের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে চীনের মাধ্যমে এর সমাধান সহজ, যদি তাদের রাজি করানো যায়। আর আলাদাভাবে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা প্রয়োজন। আরাকান আর্মির সঙ্গেও ভিন্নভাবে যোগাযোগ প্রয়োজন।’’
তিনি বলেন, ‘‘মংডুতে যা হচ্ছে, তা যদি না কমে তাহলে বাংলাদেশ সীমান্তে চাপ বাড়তেই থাকবে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।’’ টেকনাফ–২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘‘বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। ফোর্সও বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি।’’
For more information
আরো দেখুন|
Summary
Article Name
বাংলাদেশ সীমান্তে ফের বাড়ছে রোহিঙ্গাদের ভিড়
Description
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের মংডু সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছেন। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম এই গোষ্ঠীর কমপক্ষে...
Author
sylheterawaz24
Publisher Name
sylheterawaz24
Publisher Logo