আওয়াজ ডেস্ক: সিলেটের লালমাটিয়া এলাকা থেকে ট্রেনে কাটা পড়া যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তাজ উদ্দিন নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে সিলেট রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ। নিহত তাজ উদ্দিন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ফরিদপুর গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর পুত্র।
লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের দাবি যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে নিহতের পরিবারের দাবি তাজ উদ্দিনকে হত্যার পর হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মরদেহ রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছে।
নিহতের চাচাতো ভাই মারুফ আহমেদ জানান, তাজ উদ্দিন তার পাশের বাড়ির ইব্রাহীমসহ আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে ইব্রাহীম বিদেশ যাওয়ার জন্য তাজ উদ্দিনের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে আসছিলো। টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে তাদের মধ্যে মনোবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহীমের পরিবার টাকার জন্য জোরালো চাপ সৃষ্টি করেন তাজ উদ্দিনের পরিবারের উপর। এমন পরিস্থিতিতে তাজ উদ্দিনের অসুস্থ মা ও প্রবাসী ভাইয়েরা সময় নিয়েও টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না। সময়মতো টাকা দিতে না পারায় তাজ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ ও হুমকির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান মারুফ ও নিহতের বোন।
তারা আরও জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে বাড়ি থেকে বের হয় তাজ উদ্দিন। পরে জানা যায়, সিলেটে লাউয়াই গ্রামে তার মামার বাড়ি এলাকায় এমরান নামে একজনের সাথে দেখা করতে যায় তাজ উদ্দিন এবং ওইদিন টাকা দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান হাফিজ মারুফ। এমরান নামের লোকের সাথেও ব্যবসা ছিল নিহত তাজ উদ্দিনদের। সিলেট যাওয়ার পর থেকে তাজ উদ্দিনের খোঁজ পাচ্ছিলো না পরিবার। সোমবার পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুজি করা হয়। কিন্ত মামার বাড়ি থেকে জানানো হয়, তাজ উদ্দিন সেখানেও যায়নি।
মঙ্গলবার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পারাইরচক(লালমাটিয়া) রেললাইন থেকে খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করার খবর পেয়ে গিয়ে সনাক্ত করা হয় তাজ উদ্দিনের মরদেহ। ধরণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার পর মরদেহ রেললাইনে রেখে দিয়েছে, যাতে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।
এ নিয়ে সিলেট রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাফিউল ইসলাম পাঠোয়ারি এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টায় সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে দুপুরের দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল তাই ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
জানা যায়, নিহত তাজ উদ্দিন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামিযের মাইজগাঁও ইউনিয়নের সহ-সভাপতির দায়িত্ব ছিলেন। তার রহস্যজনক মৃত্যুতে শোকাহত ফেঞ্চুগঞ্জ। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে দাবি জানান স্থানীয়রা।