সিলেট ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সাদাপাথরকাণ্ডে ছয় সরকারি দপ্তর ও বেলার নথিপত্র তলব করেছে দুদক

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ণ
সাদাপাথরকাণ্ডে ছয় সরকারি দপ্তর ও বেলার নথিপত্র তলব করেছে দুদক

সাদাপাথর

কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনার পিছনের কুশীলবদের খোঁজে ৬ সরকারি দপ্তর ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কার্যালয়ের নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পৃথক পৃথক চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দপ্তরগুলো হলো- সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন অফিস, সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়, কোম্পানিগঞ্জ থানা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কার্যালয়, খনিজ সম্পদ ব্যুরো এবং খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

দপ্তরগুলোর কাছে যে-সব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) থেকে যেসব তদন্ত পরিচালিত হয়েছে তার সত্যায়িত ফটোকপি এবং সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম, বর্তমান পদবি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত তথ্যাদি।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা থেকে আনুমানিক কি পরিমাণ পাথর উত্তোলন বা আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং কি পরিমাণ পাথর পরবর্তীতে সেখানে রাখা হয়েছে, সে সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।

পাথর উত্তোলন বাবদ রাষ্ট্রের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।

পাথর লুটপাটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) থেকে যে সব মামলা দায়ের করা হয়েছে, উক্ত মামলার এজাহারের সত্যায়িত কপি, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম এবং যে সব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নাম ও ঠিকানাসহ তালিকা।

খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২ এর সত্যায়িত ফটোকপি। এছাড়াও অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্রাদি।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার বিবরণসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের নামসহ বিস্তারিত তথ্য।

এবং পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দায়ীদের শনাক্ত হয়ে থাকলে তার বিবরণ ইত্যাদি।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর সাদাপাথর লুটপাটের সঙ্গে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরুর ঘোষণা দেয় দুদক। উপপরিচালক রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অনুসন্ধান পর্যায়ে অপরাধের মাত্রা ও সংশ্লিষ্টতার ধরন বিবেচনায় পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। তারা পাথর লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়।

অভিযানে দুদকের দল দেখতে পায়, স্থানীয় প্রশাসনের পর্যটন সেবা এবং নদীর তীরেই বিজিবি ক্যাম্পের টহল চালু থাকা সত্ত্বেও বিগত কয়েক মাসে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এনফোর্সমেন্ট টিমের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে সাদাপাথর নামে একটি পর্যটনকেন্দ্র অবস্থিত। পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে, বিশেষ করে গত তিন মাস ধরে এখানে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন চলছে।

পর্যটন এলাকাটি সংরক্ষিত পরিবেশ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও প্রায় ৮০ ভাগ পাথর তুলে নেওয়ায় পুরো এলাকাটি অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে। অভিযানে ৪২ জন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা সংস্থার পাশাপাশি প্রশাসন ও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।