আওয়াজ ডেস্ক:: আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। সেক্ষেত্রে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এক কাতারে আসছেন কারণ, ক্ষমতার দীর্ঘ ১৫ বছরে সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা ‘ক্ষমতার বাইরে’ রয়েছেন। তাদের রেখে প্রবাসীসহ মহাজোটের ভাগ বাটোয়ারায় আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সংগঠনের নেতাদের দূরত্ব বাড়ছে। এই দূরত্বের কারণে এবার সিলেটের নেতারা ক্ষমতার স্বাদ পেতে মনোনয়ন যুদ্ধে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে একেক আসনে একাধিক নেতা মনোনয়ন লড়াই শুরু করেছেন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন দীর্ঘদিন ধরে ভিভিআইপি প্রার্থীদের দখলে। এই আসনে প্রতিযোগিতায় নামতে স্থানীয় নেতাদের সাহসই হচ্ছে না। ফলে এ আসনটিতে ভিআইপি প্রার্থীরা সহজেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। এ আসনের বর্তমান এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
এখন পর্যন্ত এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন কেউ নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মুহম্মাদ মনসুর ও প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নাম আলোচনায় রয়েছে। ডা. স্বপ্নীল কম সময়ে সিলেটের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন। সিলেট-২ আসন বিগত দুই নির্বাচনে শরীক দলের কাছে গেছে প্রার্থিতা। ফলে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে কেউ প্রার্থী হতে পারেননি।
এবার এ আসনে মনোনয়ন পেতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাকে মনোনয়ন দিতে ইতিমধ্যে সিলেট ও যুক্তরাজ্য থেকে দাবি তোলা হয়েছে। এ ছাড়া এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। ইতিমধ্যে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন শফিকুর রহমান। সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে। হাবিব জয়লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন। এবারো তার অবস্থান শক্ত। তবে বিএমএ’র মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তবে ২ বছরে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি বড়ভাগা সেতুতে ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প ছাড়সহ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে এসে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছেন। সিলেট-৪ আসনে এবার দলের ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। জোটের হিসেবে যাওয়ার আগে দলের ভেতরে তাকে দিতে হচ্ছে পরীক্ষা। এ আসনে নৌকার টিকিটের জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া।
এ ছাড়া সিলেট নগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেনও মাঠে সক্রিয়। সিলেটের নেতারা এ আসনে স্থানীয় নেতৃত্বের পক্ষে মাঠে একাট্টা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ আসনে যাতায়াত বাড়িয়েছেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের নেতারা তার পক্ষে মাঠে একাট্টা রয়েছেন। সিলেট-৫ আসনের বর্তমান এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান। অবসরের ঘোষণা দিয়েও তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। ২০০৮ সাল থেকে এ আসনে নৌকার টিকিটের জন্য মাঠে রয়েছেন মাসুক উদ্দিন আহমদ। তার পক্ষে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা সক্রিয় রয়েছেন।
ইতিমধ্যে তার আমন্ত্রণে জকিগঞ্জে গিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। এ ছাড়া এনজিও সংস্থা সীমান্তীকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবিরও মাঠে রয়েছেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা তার পক্ষে রয়েছেন। ইতিমধ্যে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে নির্বাচনী প্রচারণা বাড়িয়েছেন ড. কবির। জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরীও এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চান। সিলেট-৬ আসনে এবার হিসেব কঠিন। সিলেটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এ আসনটি। এ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি ঘন ঘন আসছেন এলাকায়। গত ১৫ বছর ধরে নৌকার মনোনয়নের অপেক্ষায় রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার হোসেন। গত বন্যায় তিনি গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের ঘরে ঘরে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। নৌকার টিকিটের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলেছেন তিনি।
সুত্র: মানবজমিন