সিলেট ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

ভরা মৌসুমেও খাসিয়া পানের উৎপাদন কম

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২৩, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ
ভরা মৌসুমেও খাসিয়া পানের উৎপাদন কম

স্টাফ রিপোর্টার, কমলগঞ্জ

আদিবাসী সংগঠন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল ও পুঞ্জি সূত্রে জানা গেছে, অন্য সময় একটি পানজুম থেকে প্রতিদিন তিন কুড়ি পান তোলা গেলেও, জুন থেকে আগস্ট এই ভরা মৌসুমে পাঁচ কুড়ি পান তোলা যায়। ২০ কান্তায় এক কুড়ি। এক কান্তায় ১৪৪টি পান থাকে। এবার ভরা মৌসুমে পানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিকে এবার এক কুড়ি পানের (২৮৮০টি পান) দাম অন্য বছরের মতোই ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। কিন্তু দাম থাকলেও পান উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিদের লাভ হচ্ছে না।

কমলগঞ্জ উপজেলা বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় কালেঞ্জী, লাউয়াছড়া, মাগুড়ছড়া, দেবলছড়ায় খাসিয়া পুঞ্জি আছে। এসব পুঞ্জিতে আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) লোকজন বসবাস করেন। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎসই হচ্ছে খাসিয়া পানচাষ।

খাসিয়া পানচাষিরা বলেন, পাহাড়ি টিলাভূমিতে পর্যাপ্ত সেচসুবিধা নেই। এই পান চাষ পুরোটাই প্রকৃতি-নির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টির ওপর চাষিদের নির্ভর করতে হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তাঁদের। বৃষ্টি না হলে পান উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ে। এ বছর খাসিয়া পান উৎপাদন অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে। দীর্ঘ খরার কারণে সময়মতো পানগাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। পানগাছ পরিচর্যার সময় হচ্ছে জুন থেকে আগস্ট মাস।

এই সময় পান উৎপাদনেরও ভরা মৌসুম। অনেক দেরিতে বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পান উৎপাদনে। চক্রাকারে একটি পান গাছ থেকে এক থেকে দেড় মাস পরপর একবার পান তোলা হয়ে থাকে। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

একটি পানগাছ থেকে পান তুলতে দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত বিরতি দিতে হবে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পানের উৎপাদন কম হচ্ছে। পানচাষিরা আরও বলেন, শুধু পান উৎপাদনই কমেনি, পানপাতার আকারও ছোট হচ্ছে। পানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে না। বাজারে বড় পানের চাহিদা বেশি। বড় পান হলে যে দাম পাওয়া যেত, ছোট পানে সেই দাম পাওয়া যায় না।

কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পানচাষি শামিম পামথেত বলেন, খরার কারণে সঠিক সময়ে গাছে পান আসেনি। এখন পানের ভরা মৌসুম। এখনো বৃষ্টি খুবই কম হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পুরোপুরি পান তোলা যায় না, পরিচর্যা করা যায় না।

আরেক পানচাষি জেসি পতমী বলেন, পানগাছ থেকে নতুন চারা কাটাকে বলা হয় ‘বুট টাং’। এবার খুব কমই চারা কাটা হচ্ছে। এখন গাছ পরিচর্যার মৌসুম। এ মৌসুমে একটি পানজুমে (পানখেত) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব গাছ রোগাক্রান্ত হয় বা মরে যায়, সেগুলো পাল্টে পুনরায় চারা লাগানো হয়। এবার অনেক জুমেই চারা রোপণ করা হচ্ছে না। এতে আগামী মৌসুমেও পান উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী (সমাজপ্রধান) জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, পানচাষ খুব সতর্কভাবে ও যতœ নিয়ে করতে হয়। অনাবৃষ্টিতে পান পরিচর্যায় দেরি হয়ে গেছে। এতে পানের উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। খাসিয়ারা পানের ওপরই নির্ভর করে থাকেন। পান উৎপাদন কম হওয়ায় কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।