নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুনামগঞ্জের ছাতকে একাধিক মাটি ভরাট প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। কাজ না করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের পর আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্যা। এ অভিযোগ দায়ের করায় উপজেলা জুড়ে দূর্নীতির বিষয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা স্বপ্না বেগমকে গত ২৯ মে কুম্বায়ন গ্রামের মেস্ত্ররহাটির ২শ’ ফুট রাস্তার মাটি ভরাটের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করা হয়। এই মাটি ভরাট প্রকল্পে কাজে ইউপি সদস্য ও প্রকল্প চেয়ারম্যান স্বপ্না বেগম ২ মেট্রিকটন চাল উত্তোলনের পর ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ওই টাকা থেকে ৪০হাজার টাকায় মাটি ভরাটের কাজ করেন। এ বিষয়ে প্রকল্পের সেক্রেটারী ও ইউপি সদস্য আবদুল মুক্তাদির প্রকল্পের বাকি ২৫ হাজারসহ আরও ২মেট্রিকটন চাল বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা ইউপি সদস্য স্বপ্না বেগমের বিরুদ্ধে।এমন অভিযোগ দায়েরের পর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ২০২১-২২/২০২২-২৩ইং অর্থ বছরে মাদরাসায় মাটি ভরাট, কবরস্থান ও ঈদগাহে মাটি ভরাটসহ মোট ৯টি প্রকল্পে প্রায় ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ প্রকল্প গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে ওই ইউপি সদস্যা গত ১৭ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাল্টা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর আত্মসাত করেছেন বলে তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন। মাটি ভরাট হয়নি অথচ অর্থ তুলে ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের এমন একাধিক প্রকল্পের কথা অভিযোগে তিনি তুলে ধরেন। ইউনিয়নের প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ দায়েরের পর উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় ২৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, ইউনিয়নের টিআর/কাবিকা/কাবিটা ও নগদ টাকাসহ ৯টি প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে নিস্পত্তির আবেদন করেন ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম। গত ২১ আগষ্ট ওই লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প কমিটির সদস্যবৃন্দ প্রকল্পগুলো সরজমিন পরিদর্শন করেন। তাদের মতে প্রাকৃতিক দূযোর্গ বন্যা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রকল্প রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেকারণে অভিযোগকারী ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম তার দায়েরকৃত প্রকল্প অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি তিনি বাতিলের আবেদন করেন।
ভূইগাঁও ছেগাপাড়া গ্রামের মাফিজ আলী ও আছকন্দর আলী এবং কুম্বায়ন গ্রামের আবদুল মানিক, আফজল হোসেন, কামরান, জামিলসহ একাধিক লোকজনরা জানান, ইউনিয়নের সরকারি মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম হয়েছে। মাটি ভরাট না করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে বলে স্বপ্না মেম্বারনির দায়ের করা অভিযোগ থেকে তারা শুনেছেন। ছেগাপাড়া গ্রামের মুরব্বি মবশ্বির আলী বলেন, কয়েক টুকরি মাটি কুম্বায়ন পঞ্চায়েতি কবরস্থানে ফেলা হয়েছে। জয়নাল হাজারী বলেন, মাদরাসার মাঠে এক মুষ্টিও মাটি ফেলা হয়নি। কুম্বায়ন জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আবদুল মুক্তাদির ওরফে আকলু মিয়া বলেন, মসজিদের পুকুরে মাটি ভরাট করা হয়েছে।
নিস্পত্তির বিষয়ে ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম বলেন, ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের অনুরোধে তার দায়েরকৃত লিখিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি নিস্পত্তি করা হয়েছে। দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত প্রাকৃতিক দূযোর্গ বন্যা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ইউপি সদস্যা কর্তৃক তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এটি মিথ্যা বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারগন আলোচনা করে নিস্পত্তি করেছেন বলে একটি আবেদন করেছেন। যেহেতু বিষয়টি সরকারি প্রকল্পের অর্থ-আত্মসাত সংক্রান্ত, সে কারনে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।