আওয়াজ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। এরপর থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য (ভিসি), উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি), প্রক্টর, প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ ডজন খানেক দপ্তর ও ইনস্টিটিউট পরিচালক পদত্যাগ করেছেন।
এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। এ অচলাবস্থা দ্রুত কাটিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক করতে ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গতিশীল করতে খালি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দ্রুতই পূরণ করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ রোববার থেকে মাধ্যমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে শাবির শূন্য পদে ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন শাবি ১৩তম উপাচার্য, তা নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা।
শাবির পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. আমানুল্লাহ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম ও অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ উদ্দিন, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ সিদ্দিকী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
ভিসি হতে এসব শিক্ষকদের বাইরে অনেকে সিভি জমা দেওয়ার পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শীর্ষস্থানীয় এ পদ বাগিয়ে নিতে আলোচিত অনেকে ঢাকায় অবস্থান করে অন্তরবর্তীকালীর সরকারের উপদেষ্টাসহ তাদের কাছের ব্যক্তিদের সাথে লবিং তৎপরতা বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, নির্দলীয় ও একাডেমিশিয়ান এমন একজনকে শাবির উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে পদটি খালি রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নতুন উপাচার্য হিসেবে একাডেমিশিয়ান এবং নির্দলীয় এমন একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দেখতে চায়। উপাচার্য হিসেবে যিনি আসবেন, তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে পারে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।
আলোচিত শিক্ষকদের মধ্যে উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে শীর্ষে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এস. এম আমানুল্লাহ। বিভিন্ন জায়গায় গুঞ্জন উঠেছে তিনিই হচ্ছেন শাবিপ্রবির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এরপর আলোচনায় রয়েছেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) শাবির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম। শিক্ষকদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠতা, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন, শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয়তার দিক দিয়ে একটু এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এতে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিনও।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, গ্রহণযোগ্যতা কিংবা কালচারাল ওরিয়েন্টেডের দিক বিবেচনায় অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক এবং অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ সিদ্দিকীকে এগিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় সরব আছেন তারা। তবে এ দুইজন শিক্ষকের মধ্যে একাডেমিক এক্সিলেন্সের দিকে অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ সিদ্দিকীকে এগিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের পক্ষে তিনি বেশ সরব ছিলেন। এতে আলোচিতদের মধ্যে কেউ নাকি এর বাইরের কেউ শাবির উপাচার্য হয়ে আসছেন তা নিয়ে রয়েছে নানা কৌতূহল।
তবে আলোচিত নামগুলোর মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষককের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অনিয়ম, উপাচার্যের আস্থাভাজন হয়ে বিভিন্ন সুবিধাভোগী, ভিসি বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধাচরণ, সাধারণ ও দলীয় শিক্ষকদের উপর ক্ষমতা প্রদর্শনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত শিক্ষকরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সক্রিয় আছেন বলে জানা গেছে।
অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের বাইরের কাউকে ভিসি হিসেবে চাই না, শিক্ষক সমাজও তা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। তাই এই সংকট সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ আসুক সেটা আমাদের প্রত্যাশা। তবে সমালোচিত, সুবিধাভোগী কিংবা অসৎ কেউ আসুক সেটা আমরা চাই না। যারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে তারাই যেন দায়িত্ব পায়।
অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ভিসি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা সবাই যোগ্য, শিক্ষক হিসেবে তারা আমার পিতৃতুল্য। তবুও বৈষম্যদূর করতে কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে আমি নৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।
অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করছে, আমি সেটা করছি না। তবে যিনিই আসুক, বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভালোভাবে চলে সেটাই আমার চাওয়া।
অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, আমার কাছে সিভি চেয়েছে, আমি জমা দিয়েছি। আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত, তবে এখন নির্দলীয় কাউকে ভিসি হিসেবে পাওয়া খুবই কঠিন। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে দ্রুত সময়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করুক। তবে উপাচার্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ভালো হবে, কারণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক বিষয়ে অবগত থাকেন, বাইরের কেউ হলে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বুঝতে অনেকটা সময় চলে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট শাবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক বডির সবাইকে পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এরপর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রধান প্রকৌশলী, প্রক্টর, ছয় হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও দপ্তর পরিচালক, ভিসির পিএস, এপিএসসহ ৪০ জনের অধিক পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। এতে একে একে সবাই পদত্যাগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
For more information
আরো দেখুন|
Summary
Article Name
কে হচ্ছেন শাবির ভিসি?
Description
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। এরপর থেকে দেশের পাবলিক...
Author
sylheterawaz
Publisher Name
sylheterawaz
Publisher Logo