সিলেট ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

এবার মুহিবের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আ. লীগ নেতার মামলা

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
এবার মুহিবের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আ. লীগ নেতার মামলা

সিলেটের বিশ্বনাথে দুই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি যেন থামছেই না। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে একে অপরের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে মুখোমুখি উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এস এম নুনু মিয়া এবং পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান।

ফেসবুক-ইউটিউবে এই নিয়ে পাল্টাপাল্টি বাহাস বন্ধ করে উপজেলার মান-সম্মান রক্ষা ও ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়নকাজ এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও। এরপরও থামছে বাকযুদ্ধ। এবার একজন অপরজনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভে এসে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এস এম নুনু মিয়ার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে বিষোদগার করায় নুনু মিয়ার অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. নুরুল হক বাদী হয়ে পৗর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।

বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করা হয়। মামলায় বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া মামলায় আরও দুই/তিনজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান সুমন। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সিলেট জেলা তথা সারাদেশে একটি পরিচিত মুখ। তিনি ২০১৯ সালে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে উপজেলার নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অভিযুক্ত মুহিবুর রহমান বিভিন্ন জায়গায় নুনু মিয়ার বিরুদ্ধে নানাবিধ কুৎসা রটনা করে আসছেন।

এরই ধারাবাহিকতা আসামি মুহিবুর রহমান, নুনু মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা নীতিভ্রষ্ট অসৎ উদ্দেশ্যে মানহানিকর বক্তব্য তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন। এছাড়া আসামি মুহিবুর রহমানের মিথ্যা মানহানিকর বক্তব্যের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নুনু মিয়ার সম্মানহানি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

মামলার বিষয়ে পৌর মেয়র ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, যিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সেই নুরুল হক নুনু মিয়ার টিউবওয়েল বাণিজ্যের সঙ্গে ভাগাভাগিতে জড়িত। আর আমি জনগণের পক্ষ নিয়েছি বলে মামলা হয়েছে। মামলা হোক, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে হাজারটা মামলার আসামি হতে রাজি আছি।

দুই জনপ্রতিনিধির এমন কাণ্ডে বিশ্বনাথের সর্বত্র এখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পাশাপাশি আলোচিত এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা। যে কোনো সময় ওই দুই শীর্ষ জনপ্রতিনিধির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র মুহিবুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার দাপট দেখানো নিয়ে রেষারেষি চলে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হলে সেখানে ছুটে গিয়ে মুহিবুর রহমান ভিডিও করে নানা বক্তব্যসহ নিজ ফেসবুক আইডি ও পেজে আপ দিচ্ছেন।

এ নিয়ে প্রায় নীরবই ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুনু মিয়া। তবে  মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে মুহিবুর রহমানের অনুসারী উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি জামাল আহমদ বাদী হয়ে নুনু মিয়া, তার ব্যক্তিগত সহকারী বিশ্বনাথ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্য দবির মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন।

সরকারি বরাদ্দের বাথরুমসহ ডিপ টিউবওয়েল (ওয়াশ ব্লক) ও কালভার্ট দেওয়ার প্রলোভনে চার লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ মামলা করা হয়। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের এএসপিকে (বিশ্বনাথ সার্কেল) নির্দেশ দেন।

এই মামলায় ক্ষেপে যান উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়া। এতে পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে সতর্ক করে গত ২৪ আগস্ট একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।

ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে নুনু মিয়াকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমার মায়ের কসম দিয়ে বলছি, মুহিবুর রহমান সাবধান, এতদিন আমি শুধু অবজার্ভ করেছি ও ধৈর্য ধরেছি। তোমার নাড়িভুঁড়ি আমার হাতে। আমি যদি শুরু করি, বৈরাগী থেকে বিশ্বনাথ, বিশ্বনাথ থেকে উপশহর, উপশহর থেকে ঢাকা কোন জায়গায় তুমি কী করেছো সবগুলো আমি জানি। আর যদি আমার বিশ্বনাথের সাধারণ কোনো মানুষকে খারাপ ভাষায় কথা বলো, তাহলে আমি তাদের পাশে থাকবো। সাবধান করে দিলাম মুখ সামলিয়ে কথা বলবে।’

তিনি আরও বলেন, গম চুরির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তুমি (মুহিবুর রহমান) আর আমাকে চোর বলবা একথা আমি মেনে নেবো না। তোমাকে সতর্ক করে দিতে চাই, সহ্য অনেক করেছি। তুমি মুহিবুর রহমান কী আমি জানি না? এখনো সময় আছে, তুমি যা চিন্তা ভাবনা করতেছ বিশ্বনাথকে নিয়ে আমি আবার সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, যা করেছো তা করেছো আর বেশি বাড়াবাড়ি করবে না। আমি আমার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে সব অন্যায়ের মোকাবিলা করবো। আজ আমার বক্তব্যের পরে তুমি যদি তোমার সব বক্তব্য প্রত্যাহার না করো, তাহলে কত ধানে কতো চাল তা তোমাকে (মেয়র) বুঝিয়ে দেবো।’

এর আগে ২৩ আগস্ট চেয়ারম্যান নুনু মিয়াকে ‘চোর’ আখ্যায়িত করে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেন মেয়র মুহিবুর রহমান।

ভিডিওতে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে এসে নির্বাচন করেন, তাদেরকেও মানুষ সহজে গ্রহণ করে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। প্রবাস থেকে যারা এসে জনপ্রতিনিধি হন তাদের একটা গুণাবলি থাকে যে, প্রবাসীরা ঘুষ-দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম শুধু বিশ্বনাথের নুনু মিয়া। উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির কথা উঠলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নুনুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

মেয়র মুহিব বলেন, ‘এতসব অন্যায় ও দুর্নীতির প্রমাণ আমার কাছে আছে, আমি তা ওপর মহলে পাঠিয়েছি। কিন্তু মেয়র হিসেবে জনগণকে সচেতন করা ছাড়া আমার কিছু করার নাই। তাই আমি এইসব অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে অবহিত করেই যাচ্ছি। আর সেটা নির্ভয়ে করে যেতে চাই। কারণ আর যাতে বিশ্বনাথের জনগণ প্রতারিত না হন।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সিলেটের বিশ্বনাথে পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদ।