সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস: সিলেটে দুই বছর ধরে বন্ধ ভ্যাকসিন কার্যক্রম, বাড়ছে আতঙ্ক

Stuff
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ
বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস: সিলেটে দুই বছর ধরে বন্ধ ভ্যাকসিন কার্যক্রম, বাড়ছে আতঙ্ক

আওয়াজ ডেস্ক:: সিলেটে শহর নগর এমনকি গ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা, বাড়ছে আতঙ্কও। জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। র‌্যাবিস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কুকুর রোগটির প্রধান বাহক। এছাড়া অন্যান্য প্রাণি যেমন বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরও রোগটি ছড়াতে পারে। মানুষের কাছে কুকুরের কামড়ের জলাতঙ্ক নিয়েই উদ্বেগ বেশি। তবে দিন দিন কুকুরের সংখ্যা বাড়লেও আদালতের রায়ে বন্ধ আছে কুকুর নিধন। আর প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ আছে কুকুরের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও।

সর্বশেষ ২০২১ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পশুসম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে দুই রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালানো হয়। এরপর আর কোনো কার্যক্রম হয়নি।


এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আদালতের রায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধন বন্ধ আছে। এখন শুধু ভ্যাকসিনের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।বর্তমানে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান নেই। ২০১৯ ও ২০২১ সালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পশুসম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে দুই রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালানো হয়, এরপর আর কোনো কার্যক্রম হয়নিডা. জাহিদ বলেন, কুকুর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কুকুর নির্মুল সম্ভব নয়। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে খামারের কথা চিন্তা করা যায়। যদি কুকুরের খামার করে তাদের সেখানে রাখা যায় তবে কুকুরের উপদ্রব সামাল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এটা অনেক বৃহৎ পরিকল্পনার ব্যাপার যা আমাদের মতো ছোটো সংস্থার ক্ষমতার বাইরে।এদিকে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ^ জলাতঙ্ক দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উষ্ণমণ্ডলীয় অবহেলিত রোগগুলোর মধ্যে জলাতঙ্ক একটি বড়ো কারণ। এ রোগে সাধারণত গ্রামীণ জনপদের হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শিশুরা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। অজ্ঞতার দরুণ তারা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমানে বিশ্বে বছরে ৫৯ হাজার মানুষ এ রোগে মারা যায়। রোগের লক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে মৃত্যু নিশ্চিত। তবে সময়মত অর্থাৎ কামড় বা আঁচড়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত স্থান সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পূর্ণ ডোজ টিকা নিলে জলাতঙ্ক রোগটি শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মহান বিজ্ঞানী লুই পাস্তর মৃত্যুর জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু দিবস। তার অবদানকে বিশ্বের বুকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে এবং জলাতঙ্ক রোগের ভয়াবহতা অনুধাবন করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালন করে আসছে।

জলাতঙ্কের কথা সামনে এলেই চলে আসে কুকুরের কথা। সিলেট নগরে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত। দিনে বিচরণ কম চোখে পড়লেও বিকেল গড়াতেই বাড়ছে সংখ্যা। আর রাত নামতেই ব্যস্ত রাস্তা চলে যায় কুকুরের দখলে। নগরের বিভিন্ন অলিগলি ও সড়কে কুকুরের চিৎকার আর চেঁচামেচিতে রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙছে। ক্ষুধার্ত কুকুর হামলে পড়ছে পথচারীর ওপরও। এ নিয়ে আতঙ্ক, ক্ষোভ দুটোই আছে নগরবাসীর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অসহায় তারা। কুকুর আতঙ্কে সকালে বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভয় পায়, ফজরের সময় মুসল্লিদের নামাজে যেতে বেগ পেতে হয়। রাতবিরাতে আক্রান্ত হন পথচারীরা।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, নগরে ২ হাজারের মতো কুকুর রয়েছে।। কিন্তু অনেকে বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের হিসেবের চেয়ে কুকুরের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া দিন দিন কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা প্রায় সময় বলেন, বিশ্বের কোনো সভ্য দেশেই রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে কুকুর ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় না। এটা শিশু, নারী, বয়স্ক এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য অসুবিধার হতে পারে। তারা ভয় পেতে পারে।

কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ অনেকে জানান, কুকুরের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আগে দিনে কুকুর তেমন একটা দেখা না গেলেও এখন দিনে দুপুরেও কিছু কিছু কুকুর বসে থাকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে কিংবা মার্কেট বা বাড়ির গেইটের ছায়ায়। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় দল বেধে অবস্থান নেয় রাস্তায়। বেশিরভাগ কুকুরই বেওয়ারিশ। তবে এর সাথে কারও কারও পোষা কুকুরও রয়েছে।
বেওয়ারিশ কুকুরগুলো রাতে ঘেউ ঘেউ শব্দে পাড়া মাথায় তোলে। রাতে কেউ পাড়ায় পথ চলতে গেলে কয়েকটি কুকুর এসে পথ আগলে রাখে। নতুন কেউ এলে কুকুরগুলো আরো আক্রমণাত্বক হয়ে যায়। কেবল যে পায়ে হাঁটা পথিক কুকুরের আক্রমণের শিকার, তা নয়। মোটরবাইক আরোহীর ওপরও কুকুর চড়াও হয়।

অনেক ভুক্তভোগী জানান, বর্তমানে নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন অলি-গলি ২০-৩০টি কুকুর দল করে দখল নিয়েছে, যা অত্যন্ত ভীতিকর।

২০১৯ সালে করা প্রাণী কল্যাণ আইন বলছে, মালিকানাবিহীন কোনো প্রাণি নিধন বা স্থানান্তর দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া ২০১৪ সালে একটি প্রাণিপ্রেমী সংগঠনের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতেরও। এই রায়ের কারণেই থমকে আছে কুকুর নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এবার দাবি উঠেছে, কুকুর নিয়ন্ত্রণের। অনেকে বলছেন পারিবেশবাদী যারা কুকুর নিয়ে কথা বলছেন তারা শুধু কুকুর নিয়েই চিন্তা করে, মানুষ নিয়ে এদের চিন্তা নেই। অথচ মানুষ এবং প্রাণি দুই নিয়েই সমাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতের রায়ের কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে অবস্থা ততোই গুরুতর হচ্ছে। কুকুর উপকারী প্রাণি কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে উপকারী প্রাণি অপকারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।: