আওয়াজ ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রেলওয়ে থেকে লিজ (বন্দোবস্ত) পাওয়া জায়গা বুঝে নিতে এসে জনতার ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেন আবুল বাশার মানিক নামের এক ব্যক্তি। মানিক আখাউড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজলের ভাগ্নি-জামাই। এ সময় রাসেল নামে এক ব্যক্তি মারধরের শিকার হন।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উপজেলার মোগড়া এলাকায় রেলওয়ে সেতুর পাশে একটি পুকুর লিজ নিয়েছিলেন মানিক। আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুকুরটি ভরাট করে কাজের স্বার্থে ব্যবহার করে। কাজ শেষ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যায়। পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসী জায়গাটি খেলার মাঠ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। তবে মানিক লিজের বিপরীতে নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করতে থাকেন। চলতি অর্থবছরেও লিজমানি তিনি পরিশোধ করেছেন। তবে জায়গাটি তিনি দখলে নিতে পারছিলেন না। কয়েকটি গ্রামের মানুষ এটিকে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল রেলওয়ে খেলার মাঠ ঘোষণা দিয়ে ব্যবহার করতে থাকেন।
বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা জায়গাটি মানিককে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় এ জায়গায় ফুটবল খেলা চলছিল। খেলা চলা অবস্থায়ই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। এ সময় মাঠ চাই, মাঠ চাই দাবিতে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেরা এ মাঠে খেলাধুলা করে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি ব্যক্তি লিজ বাতিল করে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিতে দাবি জানানো হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত লোকজন মানিকের ওপর চড়াও হন। এ সময় রাসেল নামে একজন মারধরের শিকার হন। জায়গা বুঝিয়ে দিতে আসা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সেখান থেকে সরে যান।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মানিকের লোভ মূলত এখানে থাকা বালু। তিনি চাচ্ছেন জায়গাটি দখলে নিয়ে নিচে থাকা বালু বিক্রি করবেন এবং আগের মতো পুকুর বানাবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল জায়গাটির উত্তর অংশ থেকে বালু উঠিয়ে বড় গর্ত করে ফেলেছিলেন।
মো. ছায়েব আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, মোগড়া রেলওয়ে সেতুর পাশের একটি বিশাল পুকুর বহু বছর আগে মানিক নামে একজন লিজ আনেন। নতুন রেললাইন নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জায়গাটিতে মালামাল রাখে। এরই মধ্যে মানিক মিয়ার লিজ বাতিল হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, কাজ শেষে পুনরায় লিজ দেওয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়ে রেলওয়ের কাছে আবেদন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফার আত্মীয় মানিক প্রভাব খাটিয়ে লিজ আনার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি এখানে থাকা মাঠের নামের সাইনবোর্ড তিনি ফেলে দেন। এলাকার মানুষ কোনোভাবেই এটাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে দেবে না।
আবুল বাশার মানিকের দাবি, তিনি রেলওয়ের নিয়ম মেনে খাজনাও পরিশোধ করেছেন। এখানে কৃষিকাজ করার ইচ্ছা তার। কিন্তু কিছু লোক জায়গাটিতে যেতে দিচ্ছে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে আসে।
For more information
আরো দেখুন|