সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মাধবদীতে বিদ্যুতের দাবিতে পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় ঢুকে ভাঙচুর, পুলিশের কয়েক শ গুলি

admin
প্রকাশিত জুলাই ১৮, ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ণ
মাধবদীতে বিদ্যুতের দাবিতে পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় ঢুকে ভাঙচুর, পুলিশের কয়েক শ গুলি

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন টেক্সটাইল শ্রমিকেরা। তাঁরা পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করেন। বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে গত চার ঘণ্টার বেশ সময় ধরে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাধবদীর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিক, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, মহাসড়ক থেকে তাঁদের সরিয়ে দিতে কয়েক শ গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আন্দোলনরত শ্রমিকেরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন। পুলিশও থেমে থেমে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। গুলিবিদ্ধসহ আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও আন্দোলনরত টেক্সটাইল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টা থেকে মাধবদীর বিভিন্ন এলাকার টেক্সটাইল শ্রমিকেরা দলে দলে পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হন। এ সময় কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিদ্যুতের দাবিতে তাঁরার নানা স্লোগান দেন। সকাল ১০টার দিকে উত্তেজিত শ্রমিকেরা পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে ঢুকে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কার্যালয়ের ফটক, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও গাছের টব ভাঙচুর করেন। মাধবদী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় র‍্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যদের পাশাপাশি নরসিংদী পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর পুলিশের অনবরত গুলিতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, মাসখানেক ধরে বিদ্যুৎ কেবল আসে আর যায়। শিল্প এলাকা হওয়া সত্ত্বেও দিনে ৪ ঘণ্টারও কম সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। আগে যেখানে একজন শ্রমিক সপ্তাহে তিন হাজার টাকা আয় করতেন, এখন করছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার সমস্যার কথা জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। তাঁদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। বিদ্যুতের অভাবে রাতে ঘুমাতে পারছেন না, দিনে কাজ করতে পারছেন না। তাই সব শ্রমিকেরা মিলে আন্দোলনে নেমেছেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের শান্ত করতে ঘটনাস্থলে যান নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ও মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান। তাঁরা দফায় দফায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে চরে যান।

মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান বলেন, ‘পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে ভাঙচুরের বিষয়টি দুঃখজনক। শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছিলাম, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মাধবদীর বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান বের করব। তাঁদের ফিরে যেতে অনুরোধ করেছিলাম, শুনেনি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নরসিংদী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক আবু বকর শিবলীর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম শহিদুল ইসলাম জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন টেক্সটাইল শ্রমিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঠিক কয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, এখনই বলা যাচ্ছে না।