সিলেট ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্ক্র্যাপ মালামাল নিলামে প্রভাবশালীদের বাধা, জমা পড়েনি কোনো দরপত্র

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২৩, ২০২৩, ০৯:২০ পূর্বাহ্ণ
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্ক্র্যাপ মালামাল নিলামে প্রভাবশালীদের বাধা, জমা পড়েনি কোনো দরপত্র

শাহজাহান সেলিম বুলবুল : 
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির পুরনো কারখানার স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রির নিলামে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালীদের বাধার কারণে গত সোমবার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও কেউই দরপত্র জমা দিতে পারেনি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত হলো।

তবে র্কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় আইন অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে। র্কর্তৃপক্ষ আবার দরপত্র আহ্বান করবে।

বাধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, প্রভাবশালীদের কারণে ওই স্থানে দরপত্র জমা দিতে তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে একাধিক জায়গায় দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ঠিকাদার’রা।
গত সোমবার সকালে দরপত্র জমা দিতে বাধাপ্রাপ্ত হন সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে তারা শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

সংস্থার ট্রেডিং ডিভিশনের উপব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো. আলিমুজ্জামান মুন্সী স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের আওতাধীন সংস্থাগুলো এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা দরপত্র জমা দিতে সোমবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শিডিউলে উল্লিখিত স্থানে প্রবেশ করেন, যা কারখানা-ফটকে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু দরপত্র জমা দেওয়ার স্থানে কিছু দুষ্কৃতকারী তাতে বাধা দেয়। যে কারণে যথাসময়ে উপস্থিত হয়েও এবং উপযুক্ত দামে দরপত্র জমা করতে পারেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জে বিসিআইসির অধীনে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি নামে নতুন সার কারখানা প্রতিষ্ঠার পর পুরনো কারখানা ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডকে (এনজিএফএফএল) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পুরনো এই কারখানার যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ মালামাল হিসেবে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার নিলাম আহ্বান করা হয়। ওই নিলামে সিলেটের মেসার্স আতাউল্লাহ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে স্ক্র্যাপ কারখানা কিনে নেয়। কিন্তু নিয়মমাফিক টাকা জমা দিতে না পারায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও টাকা জমা দিতে পারেনি মেসার্স আতাউল্লাহ। এরপর আবার নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে র্কর্তৃপক্ষ।

ওই নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স সাইদুর রহমান নামের প্রতিষ্ঠান ২১১ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকায় স্ক্র্যাপ মালামাল কিনে নেয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানও নিয়মমাফিক টাকা পরিশোধ না করায় দরপত্র বাতিল করা হয়। এরপর ওই নিলামে ১৩১ কোটি টাকা দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল মামুন ট্রেডার্স ক্রেতা হিসেবে তাদের কার্যাদেশ প্রদানের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। কিন্তু কারখানা র্কর্তৃপক্ষ তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে ২০২২ সালের অক্টোবরে। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিলাম প্রক্রিয়া আবারও স্থগিত হয়। আল মামুন ট্রেডার্সের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই স্থগিতাদেশ দেয়। ওই নিলামে ২২টি দরপত্র বিক্রি হয় এবং শেষ দিন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে মেসার্স এমএম বিল্ডার্স সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি টাকা দর প্রদান করে। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মেসার্স মোস্তফা গ্রুপ ১৪৫ কোটি টাকা ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রফিক অ্যান্ড ব্রাদার্স ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দর প্রদান করে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই নিলাম স্থগিত করা হয়। এরপর চতুর্থ দফায় গত ১ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ঘটেছে প্রভাবশালীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা।

এ ব্যাপারে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির এমডি মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসাইন জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় আইন অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে, কর্তৃপক্ষ আবার দরপত্র আহ্বান করবে।