স্টাফ রিপোর্টার : বন্যা যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সিলেটের পর্যটনকে। চলতি মৌসুমে তিন দফা ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে পর্যটন খাতের ক্ষতি। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন। ব্যবসায়ীদের দাবি সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে ঈদকে ঘিরে। কিন্তু সেই ঈদুল আজহার ভরা মৌসুমেও পর্যটকমুখর হয়নি ‘প্রকৃতিকন্যা সিলেট’। রীতিমতো ধস নেমেছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যভরা সিলেট। চা বাগান, জলাবন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝরনা, দিগন্তবিস্তৃত নীল জলরাশি হাওরসহ বিভাগজুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৮ জুনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। বন্যার দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ১৬ জুন।
সেদিন আবার পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। পরে নগর এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা যায়। গত ১৯ জুন অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ওইসব উপজেলায় বন্যা বিস্তৃত হয়। এর মধ্যে ১৭ জুন থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় ফের বন্যা দেখা দেয়। পরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় তা বিস্তৃত হয়। এরপর ২৫ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করার মধ্যেই ১ জুলাই সোমবার থেকে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে আবার বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি নামছে। ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সদর,জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া বাকি সব উপজেলায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত ২১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৯ হাজার ৬৪২ জন মানুষ। দফায় দফায় বন্যায় গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। পর্যটনকেন্দ্রগুলোও রয়েছে পানিতে নিমজ্জিত। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে পর্যটনসংশ্লিষ্টরা ব্যবসার আশা করলেও প্রত্যশা পূরণ তো দূরে থাক, উল্টো ভরা মৌসুমেও খরা যাচ্ছে পর্যটন শিল্পের। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হয়েছে কোটি টাকার।
সিলেট হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। যার বেশিরভাগ এখনো ফাঁকা। ঈদের দিন থেকে বন্যা শুরু হওয়ায় প্রশাসন পর্যটক কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর থেকে দফায় দফায় বন্যার কারণে সিলেটমুখি হননি পর্যটকরা। সিলেট হোটেল, মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সুমাইয়াত নুরী জুয়েল বলেন, দফায় দফায় বন্যার কারণে পর্যটকরা সিলেটমুখি হননি। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার সময় তার হোটেলে কোনো গেস্ট আসেননি। হোটেলের রুম বুকিং ছিল একেবারে নিল। ঈদ মৌসুমে এ রকম অবস্থা আগে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, ঈদের বেশ ক’দিন চলে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে, এর পরও দেখা মিলছে না পর্যটকের। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো হোটেল-মোটেল ব্যবসা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
সিলেটের প্রধানতম পাথর কোয়ারি রয়েছে কোম্পানীগঞ্জে। সেখানে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়ে মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা সাদা পাথর নামক জায়গাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যেখানে বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভিড় জমায়। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সাদা পাথর ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে, তবে এখনো পর্যটকদের দেখা মিলছে না।
কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি আবিদুর রহমান জানান, দফায় দফায় বন্যায় পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। পানি নামতে শুরু করেছে। পর্যটক আসা এখনো শুরু হয়নি। টানা এক মাস ধরে সাদাপাথর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লিটন বলেন, বন্যায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর যাতায়াতের রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুততম সময়ে রাস্তাঘাট সংস্কার করে দেয়া প্রয়োজন। না হয় অনেক পর্যটনকেন্দ্র পর্যটক হারাবে।
তিনি বলেন, পানি নামতে শুরু করেছে খবর পেয়ে কেউ কেউ বেড়াতে আসছেন, তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখনো স্বরূপে ফিরেনি। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যার কারণে শিল্প বাণিজ্যের সব খাতে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতি হয়েছে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পানি পুরোপুরি নেমে যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলো আবার মুখর হয়ে উঠবে।
For more information
আরো দেখুন|
Summary
Article Name
তিন দফা বন্যায় সিলেটের পর্যটন শিল্পে ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি
Description
বন্যা যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সিলেটের পর্যটনকে। চলতি মৌসুমে তিন দফা ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে...বন্যা যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সিলেটের পর্যটনকে। চলতি মৌসুমে তিন দফা ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে...
Author
sylheterawaz
Publisher Name
sylheterawaz
Publisher Logo