নানামুখী চাপের মুখে এক পর্যায়ে এই সমন্বয়কদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ডিবি। বেরিয়ে তাঁরা নতুন করে আবার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং এর ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে সরকার পতনের ডাক দেন। তাঁদের গণভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ পরিচালনায় নতুন এই সরকার গঠন হচ্ছে।
এই সরকারের উপদেষ্টা হওয়া নাহিদ ও আসিফ দুজনই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা। নাহিদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আর আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। আসিফ এর আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। নানা অভিযোগ তুলে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ২১ জন নেতা। তাঁদের উদ্যোগেই গত বছর অক্টোবরে গঠিত হয় ছাত্রশক্তি। এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেন।
নুরুল হক ও আখতার হোসেনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও ডাকসুর নেতৃত্বে আসার পেছনেও ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ২০১৮ সালে তাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে সব কোটা বাতিল করেছিল শেখ হাসিনার সরকার।
দুই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে গত ১ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলে ২০১৮ সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব ধরনের কোটা পুনর্বহালের পক্ষে মত দিয়ে ওই রায়ে বলা হয়েছিল, সরকার প্রয়োজনে কোটা কমাতে বা বাড়াতে পারবে।
আদালতের এই রায়ের পর কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে গত ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়, সেখানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিলেন ছাত্রশক্তির নেতারা। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর গঠিত নতুন সরকারে জায়গা পেলেন ছাত্রশক্তির দুই নেতা। এত কম বয়সে সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির গড়লেন তাঁরা।