হাইকোর্টের আদেশের প্রতিবাদে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল রেখে সিলেট ও সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার (৭ জুলাই) সিলেট—সুনামগঞ্জ সড়কে অবরোধ চলাকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট খেললেন।
রবিবার (৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা ক্রিকেট খেলে সড়ক ব্লক করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলাকালে। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের এই সড়ক অবরোধে। তাতে রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট। শনিবার (৬ জুলাই) বিকালের দিকে শাবির ছাত্র—ছাত্রীরা ঠিক একই দাবিতে প্রায় ঘণ্টাখানকে সময় সিলেট—সুনামগঞ্জ সড়কে অবরোধ করে রাখেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে গত রবিবার সড়কে অবস্থানের আগে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এসময় সিলেট—সুনামগঞ্জ সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, আঠারোর পরিপত্র বহাল চাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ ‘আঠারোর হাতিয়ার,, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’ ও ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই’সহ নানা রকম স্লোগান দেয়।
এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই বৈষম্য দূর করার জন্যই আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি। কোটা পদ্ধতির কারণে আজ অযোগ্য লোকেরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাচ্ছে আর সঠিক যোগ্য ব্যক্তিরা পড়ে আছে অযোগ্যের তালিকায়। এতে প্রমাণিত হয় যে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তিরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দিন দিন। যার ফলে দুর্নীতি—অনিয়ম বেড়েই যাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, আমরা আন্দোলনে নেমেছি আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য। কোটাপ্রথা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। আমাদের এই চারটি দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এখানে তাদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল, পরিপত্র পুনর্বহাল সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশন গঠন করে সকল সরকারি চাকুরিতে (১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি) সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে ‘কোটা সংস্কার’ করা, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত, মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করা।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছে যে, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস—পরীক্ষা স্থগিত।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ কোটা সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে। সে সময় কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে ৷ পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৯ জুন হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতির রায় পুনর্বহাল করে।