স্টাফ রিপোর্টার: নগরীর মিরের ময়দান পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ করেছে পুলিশ সদস্যরা। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত-আহত পুলিশ সদস্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছেন তারা। সম্প্রতি পুলিশ লাইন্সে হামলার সময় কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দিকে পুলিশের পোশাক বিহীন কয়েকশ পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী অধ্বঃস্তন পুলিশ সংস্কার প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে এ বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভে কর্মসূচিতে তারা বলেন, ‘আমরা দেশবাসীর শত্রু হতে চাই না। আমরা জনগণের বন্ধু হতে চাই। আমরা তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের হয়ে কাজ করতে চাই। রাজনৈতিক মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে অনেক দালাল পুলিশ অফিসার আমাদের যেমন খুশি যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করেছে। আমরা আর এসব দলাদলিতে থাকতে চাই না। পুলিশ বাহিনীর দালালদের কারণে আমরা এবং আমাদের পরিবার এখন অনিরাপদ। আপনারা দেখেছেন কীভাবে অনেক পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এসব ছাত্রদের কাজ নয়।
সেসময় তারা ‘বিসিএসের দালালি, চলবে না চলবে না’, ‘মন্ত্রীদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষত অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১১ দফা দাবিগুলো হলো—
১. চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সব পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
২. নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, আজীবন পেনশন-রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
৩. পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ পিএসসির অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
8. সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। সেক্ষেত্রে পুলিশ পরিদর্শক পদ থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ এবং সেটি যথাসময়ে নিশ্চিত করা। সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর পদে পিএল হবার ১ বছরের মধ্যে পদোন্নতি দিতে হবে। এছাড়া কনস্টেবল/নায়েক/এটিএসআই/এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাসকৃতদের পরবর্তী বছর পুনঃপরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিল এবং পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ করা।
৫. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে ০৮ ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম দেওয়ার ব্যবস্থা করা অথবা বছরে ২টি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া।
৬. পুলিশের ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধিকরণ, টিএ/ডিএ বিল প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান এবং প্রযোজ্য সব সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ৬০ দিন করতে হবে। দেশ এবং জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়া সম্ভব না হলে অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৮. পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করতে হবে যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা এবং অধ্বঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়।
৯. পুলিশ বাহিনীকে যেনো কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে।
১০. পুলিশের সব থানা, ফাড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করতে হবে এবং অধ্বঃস্তন অফিসারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধ্বঃস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সব ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।