এবার সিলেটের ৬ সংসদীয় আসনে ৩৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। নির্বাচনে ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩১ জন ভোটার ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার মর্যাদার আসন সিলেট-১। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড, ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নিয়ে গঠিত এ আসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, আসনটিতে বিজয় মিছিলের অপেক্ষায় রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন। এই আসনে ৫জন প্রার্থী থাকলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জয়ের বন্দরে রয়েছেন ড. মোমেন। এমনটাই মনে করছেন তারা। সেক্ষেত্রে সাংসদ হিসেবে বহাল থাকতে পারেন তিনি।
বিশ্বনাথ আর ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। স্থানীয় ভোটাররা জানান, এ আসনে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের প্রার্থীতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় নৌকার প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান ছিলেন মূল আলোচনায়। নানা আন্দোলন সংগ্রামের পর গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পান মুহিবুর রহমান। প্রতীক পাওয়ার পরই পাল্টে যায় চিত্র। পাল্টে গেছে হিসেব নিকেশ। চমক দেখাতে পারেন মুহিবুর রহমান। তবে শেষ মূহুর্তে সাবেক সাংসদে আস্থা রাখতে পারেন ভোটাররা। এছাড়াও এ আসনটিতে বর্তমান সাংসদ গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. ইয়াহইয়া চৌধুরীসহ ৭জন প্রার্থী রয়েছেন।
সিসিকের ৬টি ওয়ার্ড, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এখানে সিসিকের ৮টি ওয়ার্ড ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। আসনটিতে রয়েছেন ৭জন প্রার্থী। এ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে বলে জানান ভোটাররা। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। ভোটাররা বলছেন, হাবিবুর রহমান হাবিব উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন। করেছেন নানা উন্নয়নমূলক কাজ। সেক্ষেত্রে কাজের মূল্যায়ণ হিসেবে সাংসদ হিসেবেই বহাল থাকতে পারেন তিনি। পক্ষান্তরে মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে নতুন হলেও রয়েছে তাঁর বিশাল ভোট ব্যাংক। ভোটের মাঠে দেখাতে পারেন নতুন চমক। এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা। সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আতিকুর রহমান আতিক।
এদিকে ৩টি উপজেলা নিয়ে সিলেট-৪ আসনে জয়ের প্রহর গুণছেন ছয় বারের সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইমরান আহমদ। এ আসনে আরও ২জন প্রার্থী থাকলেও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ ও সাধারণ মানুষের মন জয় করে আবারও সাংসদ হিসেবে বহাল থাকবেন তিনি। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সাধারণ মানুষ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পরেন তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন।
অপরদিকে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে। ৭জন প্রার্থী থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছাম উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবিরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন হুছাম উদ্দিন আহমদ। আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগসহ সাধারণ মানুষ তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। বাকি হেভিওয়েট দুই প্রার্থীকে টপকিয়ে চমক দেখাতে পারেন তিনি। এমনটাই মনে করছেন তারা।
এছাড়াও জেলাজুড়ে আলোচনায় রয়েছে সিলেট-৬ আসন। আসনটিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তৃণমুল বিএনপির চেয়ারপার্সন সমশের মবিন চৌধুরী ও কানাডা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন প্রার্থী থাকায় রয়েছে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিনসহ আরও ২জন প্রার্থী রয়েছেন এ আসনে। গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে গঠিত এ আসনে রয়েছে নানা গুঞ্জন। এ আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস থাকলেও শেষ মূহুর্তে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে দুইজনে। নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বতন্ত্র প্রাথী সরওয়ার হোসেনের মধ্যে শেষ লড়াই হবে। তবে কোন নাটকীয়তায় চমক দেখাতে পারেন সমশের মবিন চৌধুরী। তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমসহ আওয়ামীলীগের একটি অংশ। প্রথমদিকে ছন্নছাড়া থাকলেও শেষ মুহুর্তে ঘুরে দাড়িয়েছেন নৌকার প্রার্থী নাহিদ। গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজারে সর্বশেষ দুটি জনসভায় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা জনসমুদ্রে পরিনত হয়। আবার আস্থার প্রতিদান পেয়ে এমপির মসনদে বহাল থাকতে পারেন সাংসদ নাহিদ।
মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কানাডা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। তাঁর রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। সাথে রয়েছেন আওয়ামীলীগের একটি বিশাল অংশ। দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করার ফসল এবার তুলতে পারেন বলে মনে করছেন সরওয়ার সমর্থিতরা।
ভোট গ্রহণ শেষে রোববার হিসাব মিলবে কে হচ্ছেন সংসদ সদস্য।